কণিকনীতি (KanikaNiti)
কালীপ্রসন্ন সিংহ (Kaliprasanna Singha)কণিকনীতি মহাভারতের অংশ। মহাভারতের ১৮টি পর্ব; প্রতিটি পর্ব আবার কতকগুলি অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রতিটি অধ্যায়ে রয়েছে অনেকগুলি শ্লোক। কণিকনীতি মহাভারতের প্রথম পর্ব অর্থাৎ আদিপর্বের অন্তর্গত। আদিপর্বের ১৪২তম অধ্যায় এটি। এই অধ্যায়ে ৯৩টি শ্লোক রয়েছে। মহাভারতের পর্বগুলি এত বড়, যে সেগুলিকে ছোট ছোট কিছু পর্ব্বাধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে সুবিধের জন্য। তো সেই হিসেবে এটি আদিপর্বের অন্তর্গত সম্ভবপর্ব্বাধ্যায়ের শেষ অধ্যায়।
এবারে নীতি বা নীতিশাস্ত্র কি সেটা একটু বলে নেওয়া প্রয়োজন। নীতি মানে চলতি কথায় আমরা যেটা বুঝি সেটা কতকটা এই রকম — “গোপাল বড় সুবোধ বালক, সে সদা সত্য কথা বলে। সূতরাং গোপাল খুব ন্যায়নীতিপরায়ণ ছেলে।” প্রাচীন ভারতীয় নীতিশাস্ত্র কিন্তু আদতেই তা নয়। এই নীতি হল রাজনীতি। রাজা কি করে সুষ্ঠভাবে দেশ চালাবেন তার উপদেশ। এখন দেশ চালানো ব্যাপারটা মোটেই সুবোধ বালকের কাজ নয়। শত্রুরা সর্বদা চেষ্টা করছে কি করে ছলে বলে কৌশলে আপনার সাধের রাজ্যটি হস্তগত করতে পারে। শত্রু ঘরে, শত্রু বাইরে। কে শত্রু আর কে বন্ধু চেনা কঠিন। এই পরিস্থিতিতে আপনাকে শত্রুর থেকে সর্বদা এক পা এগিয়ে থাকতে হবে। আপনি বাঁচলে, তবে তো আপনার রাজ্যের আপনি প্রজাদের হিতসাধন করবেন। সূতরাং এই নীতি হল অত্যন্ত বাস্তবধর্মী বিষয়। ঘোর বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে রাজা ও রাজ্যের জীবন মরণের পাটিগণিত। ন্যায় অন্যায়ের চিরাচরিত মানদন্ড এখানে খাটে না। এই রাজনীতির জ্ঞান যে শাস্ত্রে বলা আছে তাই হল নীতিশাস্ত্র।
প্রাচীন ভারতে নীতিশাস্ত্রের দুটি ধারা ছিল — বৃহস্পতিনীতি এবং শুক্রনীতি। ঐতিহাসিক সময়ে আমরা পাই বিখ্যাত নীতিশাস্ত্রবিদ কৌটিল্য বা চাণক্যকে, যিনি মৌর্য্য সাম্রাজ্যের রূপকার। কৌটিল্যের পরবর্তী সময়ে কামন্দকের লেখা “নীতিসার” একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিশাস্ত্রের গ্রন্থ। এছাড়াও, কিশোর অবস্থাতেই গল্পের ছলে যাতে নীতিশাস্ত্রের পাঠ রাজপুত্রেরা পেতে পারে তাই বিষ্ণুশর্মা রচনা করেছিলেন পঞ্চতন্ত্র। হিতোপদেশের গল্পগুলিও নীতিশাস্ত্রের বিষয়েই। পঞ্চতন্ত্রের দুটি তন্ত্র (বা ভাগের) গল্পই একটু অন্যভাবে বলা হয়েছে হিতোপদেশে।
এখন কণিক হলেন মহাভারতের সময়কালের একজন নীতিশাস্ত্রবিদ; তিনি মন্ত্রীও বটে। ইনি বৃহস্পতিনীতির একটি শাখা ভরদ্বাজনীতির অনুসারী। মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র কণিককে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। এবারে যে পটভূমিতে ধৃতরাষ্ট্র তাঁকে ডেকেছেন সেটা একটু জেনে নেওয়া প্রয়োজন। মহাভারতের মূল
…